কক্সবাজারের উখিয়ায় ১৬০ একর রক্ষিত বনে ‘উন্মুক্ত কারাগার’ নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দের বিষয়টি জানত না বন বিভাগ। কারা অধিদপ্তর নির্মাণকাজ শুরু করার জন্য জমি বুঝে নিতে গেলেই বিষয়টি বন বিভাগের নজরে আসে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। এ নিয়ে সরকারি দুই দপ্তর এখন মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে।
কারা অধিদপ্তর বলছে, দেশের প্রথম উন্মুক্ত কারাগার নির্মাণের জন্য উদ্যোগ নেয় সরকার। এ জন্য উখিয়া উপজেলার পাগলিরবিল এলাকায় ভূমি মন্ত্রণালয় ২০১৯ সালে ১৬০ একর জমি কারা অধিদপ্তরের নামে বরাদ্দ দেয়। তবে বন বিভাগ ও পরিবেশবাদী সংগঠন রক্ষিত বনে কারাগার নির্মাণে আপত্তি তুলে তা বাতিল চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছে।
গত ৩০ আগস্ট বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী রক্ষিত বনভূমিতে উন্মুক্ত কারাগার নির্মাণের জন্য দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত বাতিল করতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি দিয়েছেন।
চিঠিতে বলা হয়, উখিয়ার পাগলিরবিল মৌজার আরএস ৬০২ নম্বর দাগের ৩২৫ দশমিক ৫০ একর বনভূমি ১৯৩৫ সালের জুন মাসে রক্ষিত বন ঘোষণা করা হয়।
এই বনে বৈলাম, গর্জন, জাম, তেলসুর, চাপালিশ, আকাশমণি, গামারি, মোস, কড়ই, বাটনা, ভাদি, বহেড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির সৃজিত ও প্রাকৃতিক ছোট-বড় গাছ রয়েছে। এ বন হাতি, হরিণ, বানর, বন্য শূকর, শিয়ালসহ নানা প্রজাতির প্রাণী এবং সাপ ও পাখির আবাসস্থল।
প্রধান বন সংরক্ষকের আশঙ্কা, এ রকম সমৃদ্ধ বনে উন্মুক্ত কারাগার নির্মাণ করা হলে বনভূমি সংকুচিত হওয়ার পাশাপাশি বন, বন্য প্রাণী, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কারা অধিদপ্তর বলছে, জায়গাটি বন বিভাগের নয়। ইজারা চুক্তির পর এই জমি কারা অধিদপ্তরের নামে নামজারি খতিয়ান হয়েছে। গত ২৭ মে উখিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এই জমি কারা কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। এরপর সেখানে সীমানাখুঁটি স্থাপন করে কারা কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু ২৫ জুন খবর পেয়ে বন বিভাগ অভিযান চালিয়ে খুঁটিগুলো উপড়ে ফেলে দখল উচ্ছেদ করে দেয়। এ ঘটনায় ২৪ জুলাই বন বিভাগের কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল-এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, এমনিতে রোহিঙ্গাদের কারণে উখিয়া ও টেকনাফের কয়েক হাজার একর বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে। এরপর রক্ষিত বনে উন্মুক্ত কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ কতটা সমীচীন, তা ভেবে দেখা দরকার। তিনি বলেন, এই প্রকল্প পুনর্বিবেচনার জন্য ৩ সচিব ও ১৮ দপ্তরের কর্মকর্তাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
রক্ষিত বনে উন্মুক্ত কারাগার নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি জানতেন না বলে জানান কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সরওয়ার আলম। তিনি বলেন, বিষয়টি জানার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। বন বিভাগের তরফ থেকে বরাদ্দ বাতিল চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. শাহ আলম খান বলেন, ‘তিন বছর আগে জমিটি কারা অধিদপ্তরের নামে বন্দোবস্ত দেওয়ার পর নামজারিও হয়েছে। জমির সীমানা নির্ধারণের সময় কেন বন বিভাগ বাধা দিচ্ছে, তা বোধগম্য নয়।’ তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বের আদলে উন্মুক্ত কারাগার গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই কারাগারে থাকবে দৃষ্টিনন্দন ফুল ও ফলের বাগান, কুঠিরশিল্প, খেতখামার, খেলাধুলা, পড়ালেখাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা। এটিই হবে দেশের প্রথম উন্মুক্ত কারাগার।
পাঠকের মতামত